আধুনিক বানিজ্যিক মিশ্রচাষে খাদ্য পিরামিড ব্যবহারের মাধ্যমে একজন সফল চাষী সঠিকভাব মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
মাছের খাদ্যের পিরামিড একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা মাছ চাষের সময় পুকুরের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অবস্থান ও খাদ্যাভ্যাসের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একজন চাষী মাছের উপযুক্ত বৃদ্ধি ও উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারে।
সঠিক মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানি, খাদ্য ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। পুকুরের পানির পিএইচ ৭.০ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে মাছ সুস্থ থাকে এবং রোগমুক্ত অবস্থায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এইসব নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে চাষ করলে মাছ চাষে সাফল্য ও মুনাফা নিশ্চিত হয়।
প্রথমে পানি পরিক্ষা
পুকুরে পানির গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুটের মধ্যে হলে ভাল হয়। পুকুর নির্বাচনের সময় মাটি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ এবং পুকুরটি আয়তাকার হওয়া উত্তম। আধুনিক চাষ পদ্ধতিতে পানির পিএইস(PH) ৭.০ থাকা উচিত(কলা গাছের কচি পাতার মত রং দেখায় বা সবুজ দেখায়) এই মাধ্য়মে বোঝা যায় পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। মাছের বৃদ্ধি পানি উপর শতকরা ৯০% নির্ভরশীল। কারণ পানির পিএইস(PH) ৭.০ থাকলে মাছ সুস্থ ও রোগমুক্ত অবস্থায় চলাচল করে। মাছ সুস্থ ও রোগমুক্ত অবস্থায় থাকলে সঠিক ভাবে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
একটি পুকুরে খাদ্যের পিরামিড নিম্নরূপ-
উপরের স্তর | মধ্য স্তর | নিম্ন স্তর |
---|---|---|
কাতলা , সিলভার কার্প , বিগহেড কার্প , সরপুটি , তেলাপিয়া | রুই , শিং , পাবদা , গুলিশা | চিংড়ি , কালিবাউস , মৃগেল , মিরর কার্প |
সব স্তরে দেখা যাওয়া মাছ:
গ্লাস কার্প, পাঙ্গাস মাছগুলো সব স্তরে চলাচল করতে সক্ষম এবং বিভিন্ন স্তরের খাদ্য গ্রহন করে।
মাছের খাদ্যের পিরামিডের ধারণা এবং আধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যুক্ত করা যেতে পারে। এতে করে চাষিরা আরও কার্যকরভাবে মাছ চাষ করতে পারবেন এবং মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলা ভালোভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
মাছের খাদ্যের পিরামিডের বাড়তি দিক:
প্রাকৃতিক খাদ্যের ভূমিকা: মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন শৈবাল, প্ল্যাঙ্কটন, জলজ পোকামাকড় প্রভৃতি খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করে। পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে জৈব সার (যেমন গোবর, কম্পোস্ট) এবং রাসায়নিক সার (যেমন ইউরিয়া, টিএসপি) ব্যবহার করা হয়।
পুকুরের মাটি ও পানি ব্যবস্থাপনা:
মাটির গুণমান: পুকুরের মাটি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ হওয়া ভালো, কারণ এই ধরনের মাটি পানির ধারনক্ষমতা ভালো হয় এবং পুকুরের খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে। মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।
পানির স্বচ্ছতা: পানির স্বচ্ছতা সাধারণত ৩০-৪০ সেন্টিমিটার থাকা উচিত। এর বেশি স্বচ্ছ হলে পানিতে পর্যাপ্ত খাদ্য থাকে না এবং কম হলে পানিতে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে।
পুকুরের পানির গুণগত মান:
পিএইচ মাত্রা: পিএইচ ৭.০-৮.৫ মধ্যে থাকলে মাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ে। পানির পিএইচ কম বা বেশি হলে মাছের শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দ্রবীভূত অক্সিজেন (DO): মাছের জন্য পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৫-৭ পিপিএম (ppm) হওয়া উচিত। অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ অসুস্থ হয়ে পড়ে, খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায় এবং বৃদ্ধির গতি কমে যায়।
তাপমাত্রা: মাছের বৃদ্ধি পানির তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ২৫-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা মাছ চাষের জন্য উপযোগী।
মাছের খাদ্য:
প্রাকৃতিক খাদ্য: মাছের পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন করা উচিত যেমন ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, জুপ্ল্যাঙ্কটন, যা মাছের প্রাথমিক খাদ্য সরবরাহ করে।
পরিপূরক খাদ্য: মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বানিজ্যিক খাবার (যেমন ফিড) সরবরাহ করা যেতে পারে। রুই, কাতলা, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছের জন্য প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
মাছের রোগ প্রতিরোধ:
প্রতিকার ও টিকা: মাছের রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য গ্রহণের অনীহা, অস্বাভাবিক আচরণ, দেহের রঙ পরিবর্তন ইত্যাদি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মাছের জন্য টিকা ব্যবহার এবং পানির গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করা হলে রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
মিশ্রচাষ পদ্ধতি:
মাছের বিভিন্ন প্রজাতি একই পুকুরে মিশ্রচাষ করলে পুকুরের বিভিন্ন স্তরের খাবার সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার হয়, ফলে উৎপাদন বাড়ে। যেমন, কাতলা পুকুরের উপরের স্তরে খাদ্য গ্রহণ করে, রুই মধ্য স্তরে, আর মৃগেল নিচের স্তরে খাদ্য গ্রহণ করে। এতে করে পুকুরের সম্পদ সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
এইসব নির্দেশনা এবং আধুনিক চাষ পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে একজন চাষী মাছ চাষে সফল হতে পারে এবং উচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারে।
উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলনের সাধারণ নিয়মাবলি সর্বক্ষেত্রে সঠিকভাবে মেনে একজন চাষি পরিমিত পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারেন।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।
মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।