রেণু নার্সারির সুবিধাঃ
● সুস্থ সবল পোনা অধিক মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করে।
● চাহিদা মত ও সময় মত পোনা প্রাপ্তির জন্য।
● রেণু পোনার মৃত্যুর হার কমানোর জন্য।
● মৌসুমি জলাশয়ের সঠিক ব্যবহার।
নার্সারি ব্যবস্থাপনার বিবেচ্য বিষয় ।
পুকুর নির্বাচন
■ খোলামেলা ও ছোট আয়তাকার।
■ নার্সারি পুকুরের আয়তন ১০-৩০ শতাংশ এবং গভীরতা ৩-৪ ফুট হওয়া উত্তম।
■ পানি সরবরাহ ও অপসারণ করার উত্তম ব্যবস্থা।
■তলা অল্প কাদা যুক্ত।
পুকুর প্রস্তুতির ধাপ সমূহ
পুকুর শুকানো
■ উত্তম এবং জরুরি।
■ রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দূর হবে।
■ ক্ষতিকারক পোকা মাকড়, পরজীবী রোদে শুকিয়ে মারা যাবে।
■ তলার কাদার বিষাক্ততা দূর হবে।
■ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে।
পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে
■ জলজ আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
■ শামুকের আধিক্য থাকলে তামাকের গুড়া শতাংশে ৫০ গ্রাম/ফুট হারে
ব্যবহার করা যেতে পারে।
■ রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রাণী দূরীকরণ।
■ রাক্ষুসে মাছ দূরীকরণের জন্য রোটেনন ব্যবহার করতে হবে।
■ প্রয়োগ মাত্রা: প্রতি শতকে ৩০-৪০ গ্রাম/২-৩ ফুট পানির জন্য।
নার্সারি পুকুরের চারপাশে নেটের বেড়া স্থাপন ।
জলজ আগাছা পরিষ্কার, রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রাণী নির্মূলের পর বাজারে প্রচলিত সস্তা মিহি ফাঁসের নাইলনের নেট দ্বারা পুকুরের চারপাশে পানির কিনার ঘেষে ২ ফুট উঁচু করে বেড়া দিলে ক্ষতিকারক পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, হাঁসপোকা ইত্যাদির হাত থেকে পোনামাছ রক্ষা পাবে এবং পোনা মাছের বেঁচে থাকার হার বৃদ্ধি পাবে।
পুকুরে চুন প্রয়োগ
● মাটি ও পানির অম্লত্ব দূর করে।
● চুন পুকুরের তলদেশের জৈব পদার্থকে পচাতে সহযোগিতা করে ফলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মাটির সৃষ্টিকারক পদার্থ
পানিতে মিশিয়ে মাছের খাবার যোগাতে প্রভাবিত করে।
● চুন প্রয়োগে তলদেশের পরজীবী নির্মূল, পানির ঘোলাতু দূরীকরণ ও
পানি পরিশোধনের কাজ করে।
চুন প্রয়োগ
● পুকুর শুকিয়ে বা পানিতে শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন দিতে হবে
এবং ১-২ দিন পর ৬ ইঞ্চি পানি দিয়ে রাখা ভালো।
● তবে যদি পানি না শুকিয়ে রোটেনন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে তাহলে রোটেনন প্রয়োগের ৪ দিন পর প্রয়োজনীয় মাত্রায় চুন প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগ
প্রাকৃতিক খাদ্য (সবুজ রং phytoplankton আর বাদামী রং zooplankton এর আধিক্য) জন্মানোর জন্য পুকুরে জৈব ও অজৈব সার দিতে হবে।
জৈব সার
প্রতি শতাংশে ১৫০ গ্রাম চিটা গুড়, রাইস পলিশ ২০০ গ্রাম ও ইস্ট ৫ গ্রাম ২-৩ গুন পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
অজৈব সার
■ ইউরিয়া ৫০ গ্রাম/শতাংশ।
■ টিএসপি ১০০ গ্রাম/শতাংশ।
জলজ কীট দমন
চুন ও সার প্রয়োগের ফলে পুকুরে প্লাংকটন সমৃদ্ধ হওয়ায় ৩-৫ দিনের মধ্যে হাঁসপোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
■ এরা পোনা ও পুকুরের খাবার খেয়ে ফেলে
■ পোনার লেজ কেটে ফেলে
* রেণু ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে আকা দমন করতে হবে।
* হাঁসপোকা দমনের উপায় সু তরল রাসায়নিক)
মাত্রা ১০মি.লি./শতাংশ/২-৩ ফুট র জন্য।
সুমিথিওন প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টা পরে রেণু পোনা ছাড়া যাবে।
রেণু পোনা সংগ্রহ
● ভাল জাতের পোনা অধিক উৎপাদনের নিশ্চয়তা দেয়।
● খারাপ পোনার দৈহিক বৃদ্ধি কম।
● তাই রেণু পোনা ক্রয়ের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক হওয়া উচিত।
● সততা ও সুনাম রয়েছে এমন হ্যাচারি থেকেই কেবল রেণু পোনা।
ক্রয় করা উচিত।
ভাল ও খারাপ রেণু পোনা সনাক্তকরণ।
রেণু পোনা বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধির হার ভাল ও খারাপ রেণুর ওপর নির্ভরশীল তাই হ্যাচারি বা অন্য কোন উৎস থেকে রেণু পোনা সংগ্রহের সময় নিম্নের বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা আবশ্যক।
ভাল ও খারাপ রেণু পোনা সনাক্তকরণের উপায়
দেখুন বিষয় | ভাল রেণু | খারাপ রেণু |
---|---|---|
দেহের রং | কালচে বাদামী/সবুজ ও ঝকঝকে উজ্জ্বল | ফ্যাকাশে |
চলা-ফেরা | দ্রুত ও চটপটে | ধীরস্থির |
রেণুর পাত্রে আঙ্গুল দিল | দ্রুত সরে যায় | অাস্তে অাস্তে সরে যায় |
স্রোতের বিপরীতে চলাচল অবস্থা | স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে সক্ষম | স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে অক্ষম |
রেণু পোনা পরিবহন
● রেণু পোনা পরিবহন করার ২ ঘণ্টা পূর্বে খাবার বন্ধ করা উচিত। পেটে খাবার থাকলে পরিবহনের সময় বমি ও মলমূত্র ত্যাগ করে পানি দূষিত করে ফেললে পোনা মারা যায়।
● পরিবহনের দূরত্ব, পরিবহনের পাত্রের আকার, মাছের আকার এবং পোনার পরিমাণ বিবেচ্য বিষয় ।
● একটি পলিব্যাগে (১৮x৩৬ সে.মি.) পাত্রে ৭-৮ ঘণ্টা সময়ের জন্য
১২৫-১৫০ গ্রাম রেণু পরিবহন করা যায়।
● রেণু পরিবহনের পূর্বে পলিথিন ব্যাগে ছিদ্র আছে কিনা তা যাচাই করা উচিত।
● পলিব্যাগে পানি ও অক্সিজেনের অনুপাত ১:৪ হওয়া উত্তম।
● পলিব্যাগে পানির তাপমাত্রা কম হওয়া উত্তম।
রেণু মজুদের নিয়মাবলী ও সতর্কতা
* রেণু পোনা অত্যন্ত কোমল।
* পানির তাপমাত্রা ও অক্সিজেন বিবেচ্য বিষয়।
* সূর্যোদয়ের পর সকাল বেলা ও সূর্যাস্তের পর পোনা ছাড়া উত্তম।
* কোন কারণে রোদের সময় ছাড়তে হলে পানি ওলট-পালট করে নিতে হবে।
* পলিব্যাগ চটের ব্যাগ থেকে বের করে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।
তারপর আস্তে আ হবে।
* ব্যাগের ও পুকুরের পানি ও পযাত্রা সমতার জন্য আস্তে আস্তে পুকুরের
পানি ব্যাগে প্রবেশ করাতে হবে এবং তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
* তাপমাত্রা সমতায় এলে ব্যাগ কাত করে ধরলে পোনা আপনা আপনিই
পুকুরের দিকে যাবে।
* পাড়ের কাছাকাছি রেণু পোনা ছাড়া উত্তম।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।
মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।