ভূমিকা :পাঙ্গাস একটি ব্যাপক চাষকৃত মাছের প্রজাতি। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদী কেন্দ্র চাঁদপুরে ১৯৯০ সালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সর্বপ্রথম থাই পাঙ্গাসের পোনা উৎপাদন ও পরবর্তীতে পুকুরে চাষ শুরু হয়। অত:পর মৎস্য অধিদপ্তর সহ বেসরকারি উদ্যোগে পাঙ্গাস চাষ প্রযুক্তি সারাদেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করে এবং তা দেশের প্রাণিজ আমিষ চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।
পাঙ্গাস মাছের বৈশিষ্ঠঃ
■ এ মাছ অধিক ঘনত্বে চাষ করা যায়, বৃদ্ধির হার রুইজাতীয় মাছের চেয়ে বেশি, ফলে অধিক উৎপাদন হয় এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
■প্রতিকূল পরিবেশে (কম অক্সিজেন, কম পিএইচ, ঘোলাত্বের তারতম্য ইত্যাদি) পাঙ্গাস মাছ বাঁচতে পারে।
■ রুইজাতীয় মাছের সাথে মিশ্র চাষ করা যায় এবং সর্বভূক বিধায় সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগে চাষ করা যায়।
■ স্বল্প থেকে মধ্যম লবণাক্ত পানি (২-১০ পিপিটি), ঘের, খাঁচা এবং অন্যান্য মৌসুমি জলাশয়ে পাঙ্গাস মাছ চাষ করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
পুকুর নির্বাচন : বাণিজ্যিক মাছচাষের জন্য অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পুকুর, ৪০ শতাংশ বা তদূর্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পানির গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুটের মধ্যে হলে ভাল হয়। মাটি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ এবং পুকুরটি আয়তাকার হওয়া উত্তম।পুকুর পাড়ে ঝোঁপ-জঙ্গল না থাকা ভালো, গাছের পাতা ঝরে পুকুরের পানি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুকুরের পানিতে সূর্যালোক পড়ে পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।
পুকুর প্রস্তুতি
* পাড় ও তলদেশ: পাড়ে ঝোপ-ঝাড় থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে (কমপক্ষে দৈনিক ৮ ঘন্টা) সূর্যালোক প্রবেশের সুবিধার্থে সম্ভব হলে বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে। সম্ভব না হলে অন্তত ভেতর দিকের ডাল-পালা কেটে ফেলতে হবে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করে পুকুরের পাড় মেরামত ও তলদেশ অতিরিক্ত কর্মমুক্ত করে সমান করতে হবে। অন্যথায় পুকুরের পানির গুণাগুণ দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া, তলদেশ সমান না হলে পরবর্তীতে মাছ আহরণ করা কঠিন হবে।
* জলজ আগাছা ও অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ দুরীকরণ: যদি পানি প্রাপ্তি বিশেষ সমস্যা না হয় তাহলে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে সব জলজ আগাছা এবং অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা যেতে পারে। পানি প্রাপ্তি সমস্যা হলে, প্রথমে পুকুরে বারবার জাল টেনে যতদূর সম্ভব সকল মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সব মাছ ধরে ফেলার জন্য প্রতি শতক আয়তন ও প্রতিফুট পানির গড় গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, ৪ ফুট পানির গড় গভীরতার এক একর পুকুরে ১০-১২ কেজি রোটেনন লাগবে।
* চুন প্রয়োগ: রোটেনন প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে প্রয়োগর ৫/৭ দিন পর প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এই হারে এক একর জলায়তন বিশিষ্ট পুকুরের জন্য চুন লাগবে ১০০ কেজি।
অথবা
পুকুর প্রস্তুতি
পুকুর প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য হলো মাছের বসবাস যোগ্য পরিবেশ তৈরি করা।
পুকুর প্রস্তুতির অত্যাবশ্যকীয় কাজগুলো নিম্নলিখিত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা যায়:
■ পুকুর পাড়ে আগাছা ও পুকুরের পানিতে ভাসমান, লতানো, নিমজ্জিত, ইত্যাদি জলজ আগাছা কায়িক শ্রমের মাধ্যমে পরিষ্কার করতে হবে।
■ পুকুরের তলায় অধিক কাদা জমলে বা তলা ভরাট হয়ে থাকলে তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে।
■ পুকুর শুকানোর পর ভাঙ্গা পাড় মেরামত ও তলা সমতল করতে হবে। পুকুরে রাক্ষুসে ও অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ থাকলে পাঙ্গাস চাষে সফলতা বিঘ্নিত হতে পারে। তাই পুকুরে সেচ দিয়ে বা অনুমোদিত রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে রাক্ষুসে বা অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ অপসারণ করতে হবে।
■প্রতি শতাংশে ৩০ সে.মি. বা ১ ফুট পানির গভীরতার ৪০-৫০ গ্রাম রোটেনন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
■মাটি ও পানির অবস্থাভেদে চুন প্রয়োগের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। সাধারণত প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে পাথুরে চুন ব্যবহার করা যেতে তবে, পুকুর পুরাতন ও তলায় বেশি কাদা থাকলে প্রতি শতকে অতিরিক্ত ০.৫০ কেজি পাথুরে চুন প্রয়োগ করা যেতে পারে। পাথুরে চুনের বিকল্প হিসেবে জিওলাইট প্রতি শতকে ০.৪০ কেজি বা জিওটক্স প্রতি শতকে ০.৩০ কেজি প্রয়োগ করা যায়।
■ চুন বা চুন জাতীয় দ্রব্য প্রয়োগের ২-৩ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হবে। অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ব্যবহার করা যেতে পারে। পুকুর প্রস্তুতকালীন সময়ে প্রতি শতাংশে ১০০-১২০ গ্রাম টিএসপি ও ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
■ রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে প্রতি শতাংশে ০.৫০-০.৬০ কেজি সরিষার খৈল ২৪ ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পুকুরে প্রয়োগ করলে সার প্রয়োগের ৭ দিনের মধ্যে পানির রং সবুজ বাদামী হলেই পুকুরে পোনা মজুদ করতে হবে।
পোনা মজুদকরণ
পাঙ্গাস মাছ সাধারণত একক অথবা মিশ্রভাবে চাষ করা যেতে পারে। পুকুরের নীচের স্তরের খাবার খায় এমন প্রজাতির মাছ যেমন- মৃগেল, কালিবাউস
মজুদ না করাই ভালো আর মজুদ করলে খুবই কম সংখ্যায় মজুদ করতে হবে। মিশ্রচাষের সফলতা নির্ভর করে প্রজাতি নির্বাচনের ওপর। প্রজাতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে-
● দ্রুত বর্ধনশীল জাতের আন্ত: প্রজনন মুক্ত পোনা।
● যে সব প্রজাতির মাছের বৃদ্ধির হার বেশি।
● অধিক ঘনত্বে যে সব প্রজাতির বৃদ্ধির হার ও বাঁচার হার বেশি।
● যে সব প্রজাতি সহজে রোগে আক্রান্ত হয় না ইত্যাদি।
পাঙ্গাস মাছের মিশ্রচাষে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায় এমন প্রজাতি হচ্ছে রুই, সিলভার কার্প ও মনোসেক্স তেলাপিয়া ।
পোনা মজুদ হার
■ ভাল উৎপাদন পাওয়ার জন্য সুস্থ ও সবল পোনা নির্দিষ্ট হারে মজুদ করা আবশ্যক। অধিক মজুদ ঘনত্ব পরিহার করতে হবে।
■ পাঙ্গাসের একক চাষে উন্নত মানের ২০-২৫ সে.মি. আকারের পোনা শতাংশে ১২০-১৪০ টি হারে মজুদ করা যেতে পারে।
■ পোনা প্রাপ্তির উপর পোনা মজুদের সময় নির্ভর করে। তবে জানুয়ারী-মার্চ মাসের মধ্যেই পোনা মজুদ করতে পারলে ভাল হয়।
■ মিশ্রচাষের ক্ষেত্রে নিম্নহারে পোনা মজুদ করা যেতে পারে।
সারণী-১ প্রজাতির নাম ও মজুদ সংখ্যা নিম্নরূপ-
প্রজাতির নাম | মজুদ সংখ্যা (প্রতি শতাংশ) | আকার(সে.মি.) |
---|---|---|
পাঙ্গাস | ৬০-৮০ | ১০-১২ |
সিলভার কার্প | ১২-১৫ | ২০-২৫ |
রুই | ৮-১০ | ২০-২৫ |
মনোসেক্স তেলাপিয়া | ৩০-৩৫ | ৫-৭ |
মোট | ১২০-১৪০ |
সম্পুরক খাদ্য প্রয়োগ ও মাত্রা
মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি পুকুরে সম্পুরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্য প্রয়োগের ওপরই পাঙ্গাসের বৃদ্ধির হার নির্ভর করে। গুণগত মানসম্পন্ন উপাদান ব্যবহার করতে হবে এবং প্রোটিনের পরিমাণ ২৫-৩২% নিশ্চিত করতে হবে।
সারণী-২: মৎস্য খাদ্য তৈরির সূত্র
খাদ্য উপাদান | শতকরা হার (%) | শতকরা আমিষের হার (%) | তৈরি খাদ্যে আমিষের হার (%) |
---|---|---|---|
শুঁটকী মাছের গুড়া | ২০ | ৫৬ | ১১.০০ |
সরিষার খৈল | ১৫ | ৩০ | ৪.০০ |
গমের ভূসি | ২০ | ১৫ | ৩.০০ |
চালের কুড়াঁ | ২০ | ১২ | ২.৫০ |
মিট এন্ড বোন মিল | ১০ | ৫৫ | ৫.৫০ |
সয়াবিন মিল | ১৫ | ৩০ | ৪.০০ |
মোট | ১০০ | - | ৩০.০০ |
● বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির মাছের পিলেট খাদ্য পাওয়া যায়। খাদ্যের গুণগতমান নিশ্চিত হয়ে পুকুরে পিলেট খাদ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
● মাছ ছাড়ার পরের দিন থেকে ১ম ১৫ দিন মজুদকৃত মাছের মোট দেহ ওজনের ১০-১৫% হারে ও পরে মাসে মাসে কমিয়ে ২-৩% হারে প্রতিদিন মোট পরিমাণের সকালে (৫০%) ও বিকালে (৫০%) খাবার দিতে হবে।
ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা
■ পুকুরের পানি দ্রুত কমে গেলে অন্য কোন উৎস হতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরদিকে পানি বেড়ে উপচে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে।
■ পানির স্বচ্ছতা ১০-১২ সে.মি. এর কম হলে সার ও খাবার দেয়া বন্ধ রাখতে হবে।
■ পানিতে অক্সিজেনের অভাব হলে মাছ পানির উপরে উঠে খাবি খেতে থাকে। প্রতি বিঘায় ৬০-৭০ গ্রাম অক্সিফ্লো বা অক্সি গোল্ড প্রয়োগ করা যেতে পারে। এছাড়া পানিতে লাঠি পেটা করে বা সাঁতার কেটে ঢেউ সৃষ্টি করে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিকল্পভাবে ঝরনার মাধ্যমে পুকুরে পানি সরবরাহ করা যেতে পারে।
■ মাঝে মাঝে জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
■মাঝে মাঝে হররা টেনে পুকুরের বিষক্ত গ্যাস দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
■ যে মাছগুলো বিক্রি বা খাওয়ার উপযোগী হয়ে যাবে, সেগুলো
বাজারজাত করতে হবে তাহলে ছোট আকারের মাছগুলো বাড়ার
সুযোগ পাবে।
■ মজুদকৃত মাছের বয়স ও দৈহিক ওজন বিবেচনা করে সঠিক হারে খাদ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অতিমাত্রায় খাদ্য প্রয়োগ পরিহার করতে হবে।
■ শীতে পুকুরের পানি বেশি থাকলে তা কমিয়ে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
■ পাঙ্গাস মাছের পুকুরে কম জাল টানা ভালো, বিশেষ করে শীতকালে পাঙ্গাসের পুকুরের জাল না টানা শ্রেয়।
■ মাছ মজুদের পর প্রতি ১৫ দিনে একবার ঝাঁকি জাল ব্যবহার করে মাছের নমুনায়নের মাধ্যমে গড় ওজন অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ সমন্বয় করতে হবে।
মাছ আহরণ ও উৎপাদন
■ পাঙ্গাস মাছ ৮-১০ মাস চাষ করলে গড়ে ১.৫-২.৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে এবং বিক্রয়যোগ্য হয়।
■ মাছ ধরার জন্য টানা বেড়জাল ব্যাবহার করা যেতে পারে।
■ বাজারে জীবিত অবস্থায় বিক্রয় জন্য ভোরে মাছ আহরণ করা হলে উচ্চ মূল্য পাওয়া যাবে।
■ সঠিকভাবে পাঙ্গাস মাছের মিশ্রচাষের হেক্টর প্রতি বছরে ২৫-৩০ টন মাছ পাওয়া যায়।
পাঙ্গাস চাষে বিরাজমান সমস্যাসমূহ
■ মৎস্য খাদ্যের পুষ্টিমান হ্রাস পাওয়ার উৎপাদনের হার ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে।
■ খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
■ অতি মাত্রায় মজুদ ও অধিক খাদ্য ব্যবহারের কারণে পানি দূষণের ফলে মাছে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
■ অধিক ঘনত্বে (শতাংশে ২০০-৩৫০) পোনা মজুদের ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে উৎপাদন কম হচ্ছে।
■ বছরের পর বছর একই পুকুরে কালো কাদা অপসারণ না করে পোনা মজুদের ফলে পুকুরের পানি দূষণ হয়।
■ অব্যবহৃত খাদ্য, মাছের জৈবিক বজ্য ও তলদেশের সঞ্চিত কালো কাদা
পচনের ফলে পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন
সালফাইড গ্যাসের বিষাক্ততা বৃদ্ধির ফলে মাছের মড়ক হচ্ছে।
সমস্যা নিরসণে করণীয়
■ অধিক মজুদ ঘনত্ব পরিহার করতে হবে।
■ খাদ্যে গুণগত মানসম্পন্ন উপাদান ব্যবহার করতে হবে এবং প্রোটিনের পরিমাণ ২৫-৩২% নিশ্চিত করতে হবে।
■ মজুদকৃত মাছের বয়স ও দৈনিক ওজনের ভিত্তিতে সঠিক হারে খাদ্য প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অতিমাত্রায় খাদ্য ব্যবহার পরিহার করতে হবে।
■ পানির গুণাগুণ রক্ষার জন্য প্রতি মাসে সঠিক মাত্রায় চুন/জিওলাইট ব্যবহার করতে হবে।
■ কোন কারণে মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে গেলে সাথে সাথে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
■ পুকুরে ২য় ফসলের সময় পোনা মজুদের পূর্বে অবশ্যই পুকুর শুকিয়ে কালো কাদা, অবশিষ্ট খাদ্য, ইত্যাদি অপসারণ করে সঠিক মাত্রায় চুন প্রয়োগ করে মাছ মজুদ করতে হবে।
■ মাছের স্বাদ বৃদ্ধির নিমিত্ত মাছের দেহের দুর্গন্ধ দূরীকরণের জন্য মাছ বিক্রির ২ দিন পূর্বে নতুৰ পুকুরে স্থানান্তর করে ৪৮ ঘন্টা পানি প্রবাহ দিতে হবে। এতে মাছের গন্ধ দুগ্ধ হবে ফলে ভোক্তােরর চাহিদা এব মাছের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় করণীয়
* সংরক্ষিত পিলেট খাদ্য এক মাসের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলা উচিৎ। তবে খাদ্যে এন্টি ফাংগাল এজেন্ট/এন্টি-অক্সিডেন্ট ব্যবহার করলে উপযুক্ত পরিবেশে তা ৩-৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
* পোনা মজুদের পর প্রতিদিন সকাল-বিকাল মাছের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মেঘলা দিনে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
* পুকুরের পানি কমে গেলে ভাল উৎস হতে পানি সরবরাহ করতে হবে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পুকুরের পানি বেড়ে গিয়ে উপচে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে পানি বের করে দিতে হবে।
* সেকি ডিজে পানির স্বচ্ছতা ৮ সেন্টিমিটারের নীচে নেমে গেলে খাবার দেয়া বন্ধ থাকবে।
* পানিতে অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানির উপরের স্তরে উঠে খাবি খেতে থাকে। এই অবস্থায় পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করে/প্যাডেল হুইল বা এ্যারেটর ব্যবহার করে বা অন্য কোন উপায়ে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
*পুকুরের তলায় যাতে বিষাক্ত গ্যাস জমতে না পারে সেজন্য মাঝে মাঝে হররা টানতে হবে।
* জাল টেনে মাঝে মাঝে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
* বিক্রির উপযোগী মাছ ধরে ফেলতে হবে যেন অপেক্ষাকৃত ছোট মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
* ফেব্রুয়ারী-মার্চে মজুদ করে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব মাছ ধরে ফেলতে হবে।
* বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করা প্রয়োজন।
* ভোর বেলায় মাছ ধরতে হবে।
উৎপাদন
বর্ণিত পদ্ধতিতে একর প্রতি মাছের উৎপাদন ৪-৫ টন পাওয়া সম্ভব।
সম্ভাব্য উৎপাদন ব্যয়, আয় ও মুনাফা (এলাকাভেদে ইজারা মূল্য ও উপকরণ মূল্যের পার্থক্যের জন্য ব্যয়, আয় ও মুনাফা কমবেশী হতে পারে) জলায়তন এক একর, সময়কালঃ ৮-৯ মাসে।
ব্যয়ের খাত | ব্যয় (টাকা) |
---|---|
ইজারামূল্য, পুকুর প্রস্তুতি, রোটেনন, চুন, সার ইত্যাদি থোকি | ৬০,০০০.০০/- |
পোনা: বিভিন্ন মডেলের গড় থোক (মডেল ভেদে তারতম্য হবে) | ৬০,০০০.০০/- |
খাবার: ৯০০০ কেজি X ৪০ টাকা(নিজস্ব খামারে উৎপাদিত) | ৩,৬০,০০০.০০/- |
অন্যান্য (শ্রমিক, জালটানা, ঔষধপত্র,বাজারজাতকরণ): থোক | ১,০০,০০০.০০/- |
জমানো টাকা | ৩৯,৩৭৫.০০/- |
মোট ব্যয় | ৬,০৯,৩৭৫,০০/- |
আয়: উৎপাদন ৪৫০০ কেজি x ২২৫ টাকা প্রতি কেজি হারে = ৳ ১০,১২,৫০০/-
ব্যয়: ৬,০৯,৩৭৫/-
মুনাফা: ১০,১২,৫০০-৬,০৯,৩৭৫ = ৳ ৪ ,০৩, ১২৫/-
উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলনের সাধারণ নিয়মাবলি সর্বক্ষেত্রে সঠিকভাবে মেনে একজন চাষি এ পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।
মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।