ভূমিকা : উপমহাদেশে “স্পোর্ট ফিশ” হিসেবে সমাদৃত মহাশোল মাছ বাংলাদেশে বিদ্যমান বিপন্ন প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছের মধ্যে অন্যতম । কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের (যেমন-ময়মনসিংহ, সিলেট, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম) পররাতা নদী, ঝর্ণ, লেক এবং পাশ্ববর্তী খালে-বিলে ২টি প্রজাতি মহাশোলের (Tor tor এবং T.putitora) প্রাচুর্যতা ছিল। বিভিন্ন মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রকৃতির কারণে এদেশে মহাশোলেসহ বহু মূল্যবান মৎস্য প্রজাতির বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাকতিক জলাশয়ে মহাশোলের প্রাপ্যতা মারাত্বকভাবে হ্রাস পেয়ে মাছটি প্রার বিলুপ্তির পথে। মাছটির জীববৈচিত্র হ্রাসের অন্যতম কারন হিসেবে কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছের তুলনায় এর অত্যন্ত কম ডিম ধারন ক্ষমতাকেও (৬,০০০-১১,০০০/কেজি) চিহ্নিত করা হয়। বর্ণিত কারণসমূহ বিবেচনায় রেখে বিলুপ্তপ্রায় মাছের জীববৈচিত্র রক্ষায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট গবেষণা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। প্রাকৃতিক পৱিৰেশে এর জীববৈচিত্র সংরক্ষণের অংশ হিসেবে ইনষ্টিটিউট প্রজননের মাধ্যমে উৎপাদিত পোনা বিভিন্ন জলজ পরিবেশে অবমুক্তি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
চাষ পদ্ধতি :
পুকুর নির্বাচন : বাণিজ্যিক মাছচাষের জন্য অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পুকুর, ৪০ শতাংশ বা তদূর্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পানির গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুটের মধ্যে হলে ভাল হয়। মাটি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ এবং পুকুরটি আয়তাকার হওয়া উত্তম।
* পাড় ও তলদেশ: পাড়ে ঝোপ-ঝাড় থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে (কমপক্ষে দৈনিক ৮ ঘন্টা) সূর্যালোক প্রবেশের সুবিধার্থে সম্ভব হলে বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে। সম্ভব না হলে অন্তত ভেতর দিকের ডাল-পালা কেটে ফেলতে হবে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করে পুকুরের পাড় মেরামত ও তলদেশ অতিরিক্ত কর্মমুক্ত করে সমান করতে হবে। অন্যথায় পুকুরের পানির গুণাগুণ দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া, তলদেশ সমান না হলে পরবর্তীতে মাছ আহরণ করা কঠিন হবে।
* জলজ আগাছা ও অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ দুরীকরণ: যদি পানি প্রাপ্তি বিশেষ সমস্যা না হয় তাহলে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে সব জলজ আগাছা এবং অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা যেতে পারে। পানি প্রাপ্তি সমস্যা হলে, প্রথমে পুকুরে বারবার জাল টেনে যতদূর সম্ভব সকল মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সব মাছ ধরে ফেলার জন্য প্রতিশতক আয়তন ও প্রতিফুট পানির গড় গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ ফুট পানির গড় গভীরতার এক একর পুকুরে ১০-১২ কেজি রোটেনন লাগবে।
* চুন প্রয়োগ: রোটেনন প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে প্রয়োগর ২/১ দিন পর প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এই হারে এক একর জলায়তন বিশিষ্ট পুকুরের জন্য চুন লাগবে ১০০ কেজি।
মহাশোল মাছের বৈশিষ্ট্য :
. পাহাড়ি খরস্রোতা নদী,ঝর্ণা এবং লেক এদের মূল আবাসস্থল:
শীতকালে অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রায় এ মাছটি প্রজনন করে থাকে;
কার্প প্রজাতির অন্যান্য মাছের সাথে এর মিশ্রচাষ করা যায়;
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত বেশি বলে এ মাছটি সাধাবণত রোগাক্রান্ত হয় না।
নিয়ন্ত্রিত প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কৌশল : ব্রুড মাছ ব্যবস্থাপনা কৌশল :
সাধারনত নভেম্বর-জানুয়ারি পর্যন্ত মহাশোল মাছের সর্বানুকূল প্রজননকাল, যখন পুকুরের পানির তাপমাত্রা ১৭-২২° সে. বজায় থাকে।
• সারাবছর পানি থাকে এমন ৪-৫ ফুট গভীর পুকুর প্রজননক্ষম মাছের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
প্রজনন মৌসুমের ১-২ মাস পূর্বে স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা পুকুরে মজুদ করতে হয়।
* ব্রুড মহাশোল মাছ হেক্টর প্রতি ১,০০০-১,৫০০ টি মজুদ করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
মাছের পরিপক্কতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন পুকুরে ২-৩ ঘন্টা পরিস্কার পানি সরবরাহ করার ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়।
• মজুদকৃত ব্রুড মাছকে ২৫% প্রোটিন সমৃদ্ধ সম্পূরক খাদ্য দেহ ওজনের ৪-৫% হারে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে।
পুকুরের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখার জন্য হেক্টর প্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া ও ৪০ কেজি টিএসপি ১৫ দিন পর পর পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে হয় ।
প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন, নিয়ন্ত্রিত প্রজনন ও পোনা প্রতিপালন :
প্রজনন মৌসুমে পরিপক্ক স্ত্রী মাছের ডিম্বাশয় ডিমে ভর্তি থাকে বলে পেট ফোলা ও ক্ষীত হয় এবং বক্ষ পাখনা মসৃন থাকে।
পুরুষ মাছের বক্ষ পাখনা খসখসে এবং জননাঙ্গের সামান্য উপরে চাপ দিলে সাদা মিল্ট বের হয়ে আসে।
নিষিক্ত ডিমগুলোকে কয়েকবার ডিপটিউবওয়েলের পানি দিয়ে ধুয়ে ডিমের আঠালুভাব দূর করে হ্যাচিং জারে স্থাপনা করা হয়।
সাধারনত ২১-২৩° সে.পানির তাপমাত্রায় ৭২-৮০ ঘন্টা পর ডিম ফুটে লার্ভি বের হয়ে আসে। মহাশোল মাছের ডিমের পরিস্ফুটনের হার ৭০-৭৫% হয়ে থাকে।
লার্ভির বয়স পাঁচ দিন হলে এদের খাবার হিসেবে হাঁস-মুরগীর ডিমের সিদ্ধ কুসুম সরবরাহ করা হয় এবং এ সয়মই রেণুপোনা আঁতুড় পুকুরে ছাড়ার উপযোগী হয়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত রেণুপোনার বাঁচার হার ৮০-৯৫% হয়ে থাকে।
নাসারি পুকুরে পোনা লালন কৌশল :
মহাশোলর নার্সারি ব্যবস্থাপনার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিশেষ ভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে :
. নার্সারি পুকুরের আয়তন ১০-২০ শতাংশ এবং গভীরতা ০.৮০- ১.০ মিটার হতে হবে।
পুকুরে পানির ইনলোট ও আউটলেট থাকা নার্সারি পুকুরের পানির গুণাগুণ ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
. সাধারণ কার্প জাতীয় মাছের নার্সারি ব্যবস্থাপনার মত মহাশোলের নার্সারি পুকুর থেকে বিভিন্ন ধরণের জলজ আগাছা যেমন- কচুরিপানা, টোপা পানা, ক্ষুদি পানা এবং তন্ত জাতীয় বিভিন্ন শেওলা দমন করতে হবে।
অত:পর পুকুর শুকিয়ে বা রোটেনন (১ পিপিএম) প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অন্যান্য অবস্থিত মাছ দমন করতে হবে।
শুষ্কসপুকুরের তলদেশ বা নির্ধারিত গভীরতায় পানিতে প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
নার্সারি পুকুরে ৫ দিন বয়সের রেণুপোনা (১.১২-১.২৫ সেমি.) প্রতি শতাংশে ২,৪০০টি (৬০০,০০০ টি/হেক্টর) ছাড়তে হবে।
নার্সারি পুকুরে পোনা মজুদের পর সম্পূরক খাবার হিসেবে ১ম সপ্তাহে নার্সারি ফিড এবং পরবর্তী ৬ সপ্তাহ স্টার্টার-১ ফিড পেনার দৈহিক ওজনের ৭-১০ ভাগ হারে প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতি সপ্তাহে একবার নমুনায়ন করে পোনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে খাবারের পরিমাণ সমন্বয় করা আবশ্যক।
এভাবে ২মাস পোনা লালন পালনের পর পোনার আকার যখন ৬.০-৭.০ সেমি. হলে চাষের পুকুরে ছাড়ার উপযোগী হয়।
পোনা মজুদ
সময় ও সতর্কতা: পুকুর প্রস্তুতির ৪/৫ দিন পর যখন পানি হালকা সবুজ রং ধারণ করবে তখন পানা মজুদ করা যাবে। চাপের পোনা ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসেই মজুদ করা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা পুকুরে ছাড়ার সময় পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য পাত্রের পানি পুকুরের পানির সাথে কিছুটা সময় নিয়ে অল্প অল্প করে পরিবর্তন করতে হবে, যেন পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পি এইচ (pH) ক্রমশ পুকুরের পানির মত হয়ে যায়। এর পর পাত্রের পানিসহ মাছ ধীরে ধীরে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
মজুদ হার
*দেশে এখন অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মজুদ হার ব্যবহৃত হচ্ছে, এতে সংখ্যার পাশাপাশি পোনার ওজন ও কম-বেশি হয়। পদ্ধতি ও প্রজাতিভেদে পোনার আকার ২৫০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। প্যাডল হুইলে বা এ্যারেটরের সাহায্যে পানিতে অক্সিজেন মিশ্রণ ও পানি প্রবাহ তৈরির সুযোগ থাকলে মজুদ হার বাড়ানো এবং বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। সফল মজুদহারসমূহের ভিত্তিতে গঠিত চারটি মজুদ মডেল নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
আহরণ ও উৎপাদন :
• নার্সারি পুকুরে ২ মাস লালনের পর পর্যায়ক্রমে জাল টেনে এবং পুকুর শুকিয়ে চারা পোনা আহরণ করা হয়।
এ ধরণের নার্সারি ব্যবস্থাপনায় হেক্টর প্রতি গড়ে ৫.০-৫.৫ লক্ষ আঙ্গুলী পোনা উৎপাদন করা যায়।
মহাশোল মাছের মিশ্রচাষ ব্যবস্থাপনা :
আধুনিক মৎস্য চাষে রুইজাতীয় মাছের সাথে মহাশোল মাছের মিশ্রচাষ করা যায়। ফলে পুকুরের সকল স্তরের পানির উৎপাদনলীলতাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগিয়ে কাঙ্খিত পরিমানে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে বিদ্যমান সব ধরণের প্রাকৃতিক খাদ্যের পুরোপুরি ব্যবহার নিশ্চিত করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি হলো মিশ্রচাষের প্রধান উদ্দেশ্য। মিশ্রচাষের ধাপসমূহ সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি :
মহাশোল মাছের চাষ পদ্ধতি অনেকটা অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছের চাষ পদ্ধতির মতই । নিম্নে সংক্ষেপে পুকুর নির্বাচন ও চাষ পদ্ধতির ধাপগুলো বর্ণনা করা হলো :
• মিশ্রচাষের জন্য পুকুরের আয়তন ৪০-১০০ শতাংশ এবং বছরে ৮-১২ মাস ১-১.৫ মিটার পানি থাকে এই রকম পুকুর নির্বাচন
করা যেতে পারে।
জলজ আগাছা যেমন-কচুরিপানা, কলমীলতা, হেলেঞ্চা ইত্যাদি শেকড়সহ দমন করা প্রয়োজন।
পুকুর শুকিয়ে অথবা রোটেনন পাউডার প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দমন করতে হবে।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি হেক্টরে ২৫০ কেজি হারে চুন ছিটিয়ে দিতে হবে।
চুন প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর প্রতি হেক্টরে ১২.৫ কেজি ইউরিয়া এবং ২৫ কেজি টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পর পুকুরের পানি সবুজাভ হলে মাছের পোনা মজুদের উপযোগী হয়।
পোনা মজুদ :
কাঙ্খিত উৎপাদন পেতে হলে ৫-৬ ইঞ্চি আকারের সুস্থ ও সবল পোনা প্রতি হেক্টরে ৭৫০০টি মজুদ করতে হবে।
বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা মজুদের জন্য নিম্নের সারণি অনুসরণ করা যেতে পারে।
ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় করণীয়
* সংরক্ষিত পিলেট খাদ্য এক মাসের মধ্যে ব্যবহার করে ফেলা উচিৎ। তবে খাদ্যে এন্টি ফাংগাল এজেন্ট/এন্টি-অক্সিডেন্ট ব্যবহার করলে উপযুক্ত পরিবেশে তা ৩-৪ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
* পোনা মজুদের পর প্রতিদিন সকাল-বিকাল মাছের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মেঘলা দিনে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
* পুকুরের পানি কমে গেলে ভাল উৎস হতে পানি সরবরাহ করতে হবে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পুকুরের পানি বেড়ে গিয়ে উপচে পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে পানি বের করে দিতে হবে।
* সেকি ডিজে পানির স্বচ্ছতা ৮ সেন্টিমিটারের নীচে নেমে গেলে খাবার দেয়া বন্ধ থাকবে।
* পানিতে অক্সিজেনের অভাবে মাছ পানির উপরের স্তরে উঠে খাবি খেতে থাকে। এই অবস্থায় পানিতে ঢেউ সৃষ্টি করে/প্যাডেল হুইল বা এ্যারেটর ব্যবহার করে বা অন্য কোন উপায়ে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
*পুকুরের তলায় যাতে বিষাক্ত গ্যাস জমতে না পারে সেজন্য মাঝে মাঝে হররা টানতে হবে।
* জাল টেনে মাঝে মাঝে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।
* বিক্রির উপযোগী মাছ ধরে ফেলতে হবে যেন অপেক্ষাকৃত ছোট মাইগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়।
* ফেব্রুয়ারী-মার্চে মজুদ করে ডিসেম্বরের মধ্যেই সব মাছ ধরে ফেলতে হবে।
* বাজার চাহিদার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করা প্রয়োজন।
* ভোর বেলায় মাছ ধরতে হবে।
উৎপাদন
বর্ণিত পদ্ধতিতে একর প্রতি মাছের উৎপাদন ৪-৫ টন পাওয়া সম্ভব।
সম্ভাব্য উৎপাদন ব্যয়, আয় ও মুনাফা (এলাকাভেদে ইজারা মূল্য ও উপকরণ মূল্যের পার্থক্যের জন্য ব্যয়, আয় ও মুনাফা কমবেশী হতে পারে) জলায়তন এক একর, সময়কালঃ ৮-৯ মাস
মাছের প্রজাতি | মজুদ হার (%) | মজুদ ঘনত্ব (সংখ্যা/হেক্টর) |
---|---|---|
কাতলা | ৪০ | ৩,০০০ |
রুই | ৩০ | ২,২৫০ |
মৃগেল | ১৫ | ১,১২৫ |
মহাশোল | ১৫ | ১,১২৫ |
সম্পূরক খাদ্য ও সার প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা কৌশল :
মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি পুকুরে সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে।
মাছ ছাড়ার পরের দিন থেকে মজুদকৃত পোনার দৈহিক ওজনের শতকরা ২-৪ ভাগ হারে চালের কুড়া (৪০%), গমের ভূষি (২০%), সরিষার খৈল (২০%) এবং ফিসমিল (২০%) একত্রে মিশেয়ে বল আকারে পুকুরে কতিপয় নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করতে হবে।
• প্রতিমাসে নমুনায়ন করে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ মাছের দৈহিক ওজনের সহিত সঙ্গতি রেখে সম্পূরক খাদ্যের সমন্বয় করতে হবে।
পোনা ছাড়ার পর ২০ দিন অন্তর প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাপ্যতা সাপেক্ষে প্রতি হেক্টরে ১২.৫ কেজি ইউরিয়া ও ২৫ কেজি টিএসপি পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে হবে।
• প্রতি সপ্তাহে পানির গুনাগুন যেমন-তাপমাত্রা, অক্সিজেন, পিএইচ, মোট ক্ষারত্ব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
মাছের আহরণ ও উৎপাদন :
পোনা মজুদের ৮-১০ মাস পর জাল টেনে বা পুকুর শুকিয়ে মাছ আহরণ করতে হবে।
জীবিত বা তাজা মাছ বাজারে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাওয়ার লক্ষ্যে সময়মত মাছ আহরণ নিশ্চত করতে হবে।
বাৎসরিক পুকুরে ৮-১০ মাস মিশ্রচাষে মাহশোল মাছ ৬০০-৮০০
গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে।
• হেক্টর প্রতি কাতলা ২২০০-২৪০০ কেজি, রুই ১৫০০-১৭০০ কেজি, মৃগেল ৭০০-৭৫০ কেজি এবং মাহশোল ৬৫০-৭০০ কেজি উৎপাদন পাওয়া যায় ।
উত্তম মৎস্যচাষ অনুশীলনের সাধারণ নিয়মাবলি সর্বক্ষেত্রে সঠিকভাবে মেনে একজন চাষি এ পরিমাণ মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।
মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।
মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।
স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।