বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তি বুকলেট ছাগল পালন

ছাগলের রোগ বালাই তুলনামূলকভাবে কম। সাধারণত মাংস এবং দুধ উৎপাদনের জন্য ছাগল পালন করা হয়ে থাকে। দ্রুত প্রজননশীলতা, উন্নত মাংশ ও চামড়ার জন্য বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল বছরে ২ বার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে গড়ে ২টি বাচ্চা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ছাগল পালনে নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। ছাগলের জন্য বড় পশুর মত চারণভূমির প্রয়োজন হয় না। খেতের আইলে, রাস্তার ধারে বাড়ির আশ-পাশের জায়গায় ঘাস, লতা, গুল্ম খেয়ে এরা জীবন ধারণ করতে পারে; শুধু প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিচর্যা।

উন্নত জাতের ছাগল নির্বাচন :
উন্নত জাতের ছাগল এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১. ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল
২. যমুনাপারী জাতের ছাগল
৩. বিটাল জাতের ছাগল

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
* বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল অত্যাধিক কষ্টসহিষ্ণু
* এ জাতের ছাগলকে কালো ছাগল বলা হলেও এদের গায়ের ছাড়াও বাদামী, সাদা ও সাদা কালো মিশ্রিত হতে দেখা যায়
ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল
* এরা আকারে তুলনামূলক ছোট, কান সোজা ও খাড়া কিন্তু শিং বাঁকানো হয়
* এ জাতের ছাগল দ্রুত প্রজননশীল, স্ত্রী ছাগল ৯-১০ মাস বয়সে প্রথম প্রজননক্ষম ও ১৪-১৫ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা প্রসব করে
* এ জাতের ছাগল বছরে দু'বার গর্ভধারণ ও প্রতিবারে ১-২টি বাচ্চা প্রসব করে, তবে কখনও কখনও ৩-৪টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করতে দেখা যায়
* এ জাতের ছাগী দুধ কম দেয়, দুই এর অধিক বাচ্চা হলে দুধের ঘাটতি হয়
* অনেক ছাগী দৈনিক ১-১.৫ লিটার দুধ দেয় এবং দুধ প্রদান কাল ২-৩ মাস
* পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী ছাগলের ওজন ১৫-২০ কেজি এবং পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ২৫-৩০ কেজি হয়ে থাকে।
* এ জাতের ছাগলের মাংস উন্নত, অত্যন্ত সুস্বাদু ও জনপ্রিয় মাংশ; সাধারণত ২০ কেজি ওজনের খাসী থেকে কমপক্ষে ১১ কেজি মাংস পাওয়া যায়।

যমুনাপারী জাতের ছাগলঃ
* এ জাতের ছাগলের উৎপত্তি মূলত ভারত। তবে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে এ জাতের ছাগল কিছু কিছু পালন করা হয়ে থাকে; আমাদের দেশে এ জাতের ছাগল রাম ছাগল নামে পরিচিত । এদের শারীরিক রং কালো, বাদামী, সাদা বা বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে হয়।
* যমুনাপারী জাতের ছাগলের পা খুব লম্বা এবং কান লম্বা ও ঝুলানো থাকে।
* শরীরের লোম লম্বা হয়। পিছনের পায়ের লোম বেশী লম্বা থাকে ।
* এরা আকারে বেশ বড় হয়, তবে এদের চামড়া এবং মাংস তত উন্নত নয়।
* পূর্ণবয়স্ক একটি পুরুষ ছাগলের ওজন ৭০-৭৫ কেজি এবং পূর্ণবয়স্ক একটি স্ত্রী ছাগলের ওজন ৫০-৬০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
* স্ত্রী ছাগল বছরে একটি করে বাচ্চা দেয়, তবে এদের দুধ উৎপাদন বেশি; একটি ছাগী প্রতিদিন ২-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দিতে পারে।
* এ জাতের ছাগল আবদ্ধ অবস্থায় বা খামারে পালনের জন্য উপযোগী।

বিটল জাতের ছাগল
• এ জাতের ছাগলের উৎপত্তি পাকিস্তান ও ভারতে, বাংলাদেশের অল্প কিছু এলাকায় ও এ জাতের ছাগল পালন করা হয়ে থাকে।
• এরা কালো, সাদা, বাদামী বা কালো ও বাদামীর মধ্যে সাদা ফুটফুটে হয় এদের পা লম্বা, কান বড় ও ঝুলানো অনেকটা যমুনাপারী ছাগলের মত
• এদের শিং পিছনের দিকে বাঁকানো থাকে এবং আকারে বেশ বড় হয়
• এদের দুধ উৎপাদন অনেক বেশী, একটি ছাগী দৈনিক ৪-৫ লিটার দুধ দেয় • একটি পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৬০-৭০ কেজি এবং একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ছাগলের ওজন ৪০-৫০ কেজি হয়ে থাকে।
বিটল জাতের ছাগল
ছাগলের বিভিন্ন পালন পদ্ধতি ঃ
সাধারণত ৪ ধরণের পদ্ধতিতে ছাগল পালন করা হয় -
১. আঙ্গিনায় বা মাঠে ছেড়ে বেঁধে ছাগল পালন
২. মুক্তভাবে ছাগল পালন
৩. আধা নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) পদ্ধতিতে ছাগল খামার
৪. নিবিড় (ইন্টেনসিভ) পদ্ধতিতে ছাগল খামার।
আঙ্গিনায় বা মাঠে ছেড়ে/বেঁধে ছাগল পালন এ পদ্ধতিতে ২-৫ টি ছাগল পালন করা হয়, পালন সহজ ও খরচ কম হয় এ পদ্ধতিতে ছাগল পালনে মাঠে ছেড়ে/বেঁধে ঘাষ খেতে খেতে দেয়া হয়
মাঠে ছেড়ে পালন
• এদের ঘরে বাড়তি কোন ঘাস দেয়া হয় না ও লোকবলের প্রয়োজন হয় না • এদের পৃথক আবাসনের প্রয়োজন হয় না, নিজ বসত বাড়ীতেই রাখা হয়
• আমাদের দেশে বেশীরভাগ কৃষক এ পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে থাকে • ভাল উৎপাদন এর জন্য এদেরকে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
মুক্তভাবে ছাগল পালন
এই জাতীয় খামারে সাধারণত ৮-১০ টি ছাগল পালন করা হয়। এদেরকে দিনে মাঠে চাষাবাদের অনুপযোগী উঁচু জমি যেমন পাহাড়, পুকুর পাড়, রাস্তার ধারে, চর এলাকায় পতিত ভূমিতে চড়িয়ে সন্ধায় বাড়িতে এনে চারিদিকে বেড়া/ঘেরাও দিয়ে পালন করা হয়। এদেরকে রাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়। চর এলাকায় এ পদ্ধতিতে ছাগল খামার করা লাভজনক।
আধা নিবিড় (সেমি-ইন্টেনসিভ) পদ্ধতিতে ছাগল খামার ঃ
এই জাতীয় খামারে সাধারণত একসাথে ১৫-২০টি বা আরো বেশী সংখ্যক ছাগল পালন করা হয়। মুক্তভাবে ছাগল পালনের মত এ পদ্ধতিতেও দিনের বেলায় ছাগলকে মাঠে চড়ানো হয় এবং রাতে বাড়িতে এনে আবন্ধ অবস্থায় রাখা হয়। এদেরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার জন্য সম্পূরক খাদ্য হিসাবে ঘাস ও দানাদার খাদ্য দেয়া হয়। এ পদ্ধতিতে ছাগল পালনে ছাগলের পুষ্টি, প্রজনন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে যথাযথ যত্ন নেয়া সম্ভব হয়।
নিবিড় (ইন্টেনসিভ) পদ্ধতিতে ছাগল খামারঃ
এ পদ্ধতিতে খামারে আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করা হয়। ছাগলের সেডে ঘাস ও দানাদার খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক ছাগল পালন করা যায়। এ পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ছাগল পালন করা হয় বিধায় ছাগলের পুষ্টি, প্রজনন ও স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেয়া সম্ভব হয়। নিবিড় (ইন্টেনসিভ) পদ্ধতিতে একসাথে অধিক সংখ্যক ছাগল একত্রে থাকে বিধায় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের প্রকোপ বেশী দেখা দিতে পারে।
স্বাগলের খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
আমাদের দেশের ছাগলকে সাধারণত ছেড়ে পালা হয় এবং এদের খাদ্য, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তেমন কোন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে এদের নিকট থেকে আশানুরূপ উৎপাদনও পাওয়া যায় না। অথচ পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস, পরিমিত প্রক্রিয়াজাত খড়, দানাদার খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমানে পরিস্কার পানি সরবরাহ এবং গরু-ভেড়া থেকে পৃথক আবাসন ব্যবস্থা, নিয়মিত কৃমিনাশক ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হলে এদের উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা যায়।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থাপনা
• সাধারণত ১৫-২০ কেজি ওজনের বয়স্ক ছাগলের জন্য দৈনিক ১.৫ ২.০ কেজি সবুজ/কাঁচা ঘাষ খাওয়ানোর প্রয়োজন
• চারণভূমিতে ঘাসের পরিমান কম হলে ছাগল প্রতি দৈনিক ০.৫-১.০ কেজি কাঁঠাল পাতা, ইপিল ইপিল পাতা, বাবলা পাতা, ইত্যাদি দিতে হবে
• প্রতিটি ছাগলকে দৈনিক ২৫০-৩০০ গ্রাম মিশ্রিত দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
• ছাগলকে দানাদার খাদ্য হিসাবে সাধারণত চাল, গম, ভূট্টা ভাংগা, চালের কুড়া, গমের ভূষি, মাসকলাই/খেসারী কলাই, ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়
• ছাগলকে প্রচুর পরিমানে বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।
• এক কেজি মিশ্রিত দানাদার খাদ্য প্রস্তুতে বিভিন্ন উপাদনের পরিমান
গম/ভূট্টা/চাল ভাঙ্গা - চালের কুড়া ডালের ভূষি/গমের ভূষি - খৈল (তিল/সোয়বিন/সরিষা) ঝিনুক গুড়া ৩০০ গ্রাম ৩০০ গ্রাম ২০০ গ্রাম ১৫০ গ্রাম ২০ গ্রাম মোট = ১০০০ গ্রাম
• উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ছাগলকে ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ানো প্রয়োজন
• ইউরিয়া মোলাসেস-খড় প্রক্রিয়াজাত করতে বিভিন্ন উপকরণের পরিমান - ২-৩ ই করে কাঁটা খড় চিটাগুড় ইউরিয়া পানি ১ কেজি ২২০ গ্রাম ৩০ গ্রাম ৬০০ মি.লি
ইউরিয়া-মোলাসেস-খড় (ইউ.এম.এস) প্রক্রিয়াজাতকরণ ও
ইউ.এম.এস তৈরীর প্রথম শর্ত হল এর উপাদানগুলির অনুপাত সর্বদা সঠিক রাখতে হবে অর্থাৎ ১০০ ভাগ ইউ.এম.এস এর শুষ্ক পদার্থের মধ্যে ৮২ ভাগ খড়, ১৫ ভাগ মোলাসেস এবং ৩ ভাগ ইউরিয়া থাকতে হবে। খড় ভিজা বা মোলাসেস পাতলা হলে উভয়ের পরিমাণই বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রথমে খড়, মোলাসেস ও ইউরিয়ার পরিমাণ মেপে নিতে হবে। এর পর পানিতে ইউরিয়া ও চিটাগুড় মিশিয়ে উহা ভালভাবে খড়ের সাথে মিশাতে হবে। পানি বেশী হলে দ্রবণটুকু খড় চুষে নিতে পারবে না আবার কম হলে দ্রবণ ছিটানো সমস্যা হবে। শুকনো খড়কে পলিথিন বিছানো বা পাকা মেঝেতে সমভাবে বিছিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস দ্রবণটি আস্তে আস্তে ঝরণা বা হাত দিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে, এবং সাথে সাথে খড়কে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে যাতে খড় দ্রবণ চুষে নেয়
এ ভাবে স্তরে স্তরে খড় সাজাতে হবে এবং ইউরিয়া মোলাসেস দ্ৰৰণ সমভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। ওজন করা খড়ের সাথে পুরো দ্রবণ মিশিয়ে নিলেই ইউ.এম.এস প্রাণিকে খাওয়ানোর উপযুক্ত হয়। প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া মোলাসেস খড় সঙ্গে সঙ্গে ছাগলকে খাওয়ানো যায় অথবা একবারে ২/৩ দিনের তৈরী খড় সংরক্ষণ করে আস্তে আস্তে খাওয়ানো যায়। তবে কোন অবস্থাতেই খড় বানিয়ে তিন দিনের বেশী রাখা উচিৎ নয়। কারণ তাতে খড়ে ইউরিয়া এবং মোলাসেস এর পরিমাণ কমতে থাকবে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলকে দৈনিক ৫০০-৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ইউরিয়া-মোলাসেস প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানো যেতে পারে। তবে ছাগলকে প্রথম অবস্থাতেই উক্ত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য একেবারে দেয়া যাবে না। প্রাথমিকভাবে দৈনিক অল্প অল্প করে প্রক্রিয়াজাত খড় সরবরাহ করে ৩/৪ দিনের মধ্যে উক্ত খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এর পর থেকে ছাগলকে দৈনিক পূর্ণ মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানো যেতে পারে।
ছাগলকে ইউ.এম.এস খাওয়ালে সুবিধা ঃ
ইউ.এম.এস ৬ মাসের উর্দ্ধে ছাগল থেকে শুরু করে সকল বয়সের ছাগলকে তাদের চাহিদা মত খাওয়ানো যায়। যেহেতু ইউরিয়া ও মোলাসেস খড়ের সাথে ধীরে ধীরে খাচ্ছে, তাই প্রাণির বিষক্রিয়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
ছাগলকে ইউ.এম.এস খাওয়ালে অসুবিধা ঃ
ইউ.এম.এস পদ্ধতিতে ইউরিয়া মোলাসেস খাওয়ানোর তেমন কোন অসুবিধা নেই। তবে ছয় মাসের কম বয়সের ছাগলকে ইউ.এম.এস খাওয়ানো যাবে না।
ছাগলকে ইউ.এম.এস খাওয়াতে সাবধানতা অবলম্বন
ইউ.এম.এস তৈরী করার সময় অবশ্যই ইউরিয়া মোলাসেস-খড় ও পানির অনুপাত ঠিক রাখতে হবে। ইউরিয়ার মাত্রা কোন অবস্থাতেই বাড়ানো যাবে না। ইউ.এম.এস এর গঠন পরিবর্তন করলে কাংখিত ফল পাওয়া যাবে না।
ছাগলের জন্য ঘাস চাষ
• ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশী ঘাস খাওয়ানো যায়
• ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারী, মাসকলাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশী ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর
• উচ্চ ফলনশীণ নেপিয়ার, স্পেনাড্ডিা, এন্ড্রো পোগন, পিকাটুইস ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে।
ছাগলের বাসস্থান
ছাগলের রোগ বালাই কম হলেও ছাগল একটি তাপ সংবেদনশীল প্রাণী। অল্পতেই এদের ঠান্ডাজনিত অসুখ হতে পারে। তাই ছাগলের বাসস্থান এর বিষয়ে নিম্নেবর্ণিত বিশেষ যত্নবান হতে হবে - • ছাগলের ঘর শুষ্ক, উঁচু ও পানি জমে না এরূপ স্থানে নির্মাণ করতে হবে • ছাগলের জন্য সবসময়েই অধিক উপযোগী হচ্ছে মাচায় ঘর করা
• ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা এবং দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হবে • ঘরে প্রচুর আলো বাতাস ও মেঝে সবসময়ে শুদ্ধ ও পরিস্কার রাখতে হবে
• একটি পূর্ণ বয়স্ক ছাগলের জন্য ১.০ থেকে ১.৫ বর্গ মিটার বা ১০ থেকে ১৫ বর্গ ফুট এবং বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য ০.৩ থেকে ০.৮ বর্গ মিটার বা ৩ থেকে ৮ বর্গ ফুট জায়গা প্রয়োজন।
মাচায় ছাগলের ঘর ণির্মাণ
বাঁশ/কাঠ দিয়ে ছাগলের মাচা তৈরি এবং সহজে গোবর ও চনা নিচে পড়ার জন্য ঘরের মেঝেতে বাঁশের চটা বা কাঠকে ১ সে.মি. ফাকা রাখতে হবে
• ছাগলের ঘরের মাচার উচ্চতা ১.০০ মিটার বা ৩.৩৩ ফুট এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ১.৮ ২.৪ মিটার বা ৬-৮ ফুট হলে ভাল হয়
• মাচার নিচ থেকে সহজে গোবর/চনা সরানোর জন্য মাচা উঁচু করতে হবে
• ঘরের মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালি মাটি দিতে হবে বৃষ্টির পানি ছাগলের ঘরে যাতে সরাসরি না ঢোকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে
• শীত কালে যাতে ছাগলের ঠান্ডা না লাগে ঘরে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ছাগলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা
আমাদের দেশে ছাগল মূলত পিপিআর, নিউমোনিয়া ও কৃমিতে বেশী আক্রান্ত হয়। তবে নিম্নে বর্ণিত রোগে ছাগল আক্রান্ত হতে পারে
* পিপিআর
* গোট পক্স
* একথাইমা
নিউমোনিয়া
কৃমি ছাগলের পিপিআর রোগের উৎস :
পিপিআর রোগের মূল উৎস হচ্ছে পিপিআর-এ অসুস্থ ছাগলের সংস্পর্শে আসা।
রোগের লক্ষণ ঃ
• পিপিআর রোগ হলে ছাগল পিঠ বাঁকা করে দাঁড়িয়ে থাকে
• নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে তরল পদার্থ বের হতে থাকে
পিপিআর রোগের ল
• শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং পাতলা পায়খানা হয়। পিপিআর রোগে আক্রান্ত ছাগলের চিকিৎসা পাওয়া যায়
• এ রোগের চিকিৎসায় ভাল ফল
• তবে পানি স্বল্পতা পূরণে স্যালাইন খাওয়ানো/ইঞ্জেকসন দেয়া যেতে পারে
• সুস্থ অবস্থায় ও ছাগলের বয়স ৪ মাস হলে পিপিআর টাকা দিতে হবে
• পিপিজার টীকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন বৎসর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। ছাগলের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
• ছাগলের এ রোগ হলে প্রথমে ঠান্ডা ও পরে
• নাক দিয়ে শ্লেষ্মা বের হতে থাকে
• শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে এবং শ্বাস ফেলতে কষ্ট হবে। ছাগলের নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা :
এ রোগ চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়
• ছাগলকে পরিস্কার, শুষ্ক, মুক্ত বায়ু চলাচল উপযোগি ঘরে রাখতে হবে
• ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। ছাগলের কৃমি রোগ ঃ
রোগের লক্ষণ : • ছাগলের এ রোগ হলে স্বাস্থ্যহানি হয় • শরির দুর্বল ও রক্ত স্বল্পতা দেখা দেবে
• প্রজনন কম বা বিলম্ব হবে
• ছাগলের ডায়রিয়া হতে পারে।
ছাগলের কৃমি রোগের চিকিত্সা • এ রোগ চিকিৎসায় ভাল ফল পাওয়া যায়
• ছাগলকে পরিস্কার, শুষ্ক, মুক্ত বায়ু চলাচল উপযোগি ঘরে রাখতে হবে
• ভেটেরিনারি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমিনাশক চিকিৎসা নিতে হবে।
ছাগলের নিউমোনিয়া ছাগলের রোগ প্রতিকারে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন • সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য সুস্থ অবস্থায় ছাগলকে টিকা প্রদান - একথাইমা রোগের ভ্যাকসিন ছাগলের বাচ্চা জন্মের ৩য় দিনে ১ম ডোজ এবং ১৫-২০ দিন পর ২ ডোজ দিতে হবে ৩ মাস বয়সে ছাগলকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে ৪ মাস বয়সে পিপিআর রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে ৫ মাস বয়সে গোট পক্সের ভ্যাকসিন দিতে হবে।
পালের সব ছাগলকে একই দিনে বছরে দু'বার (বর্ষার শুরু ও শীতের শুরুতে) কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে ছাগলের সুস্থতার লক্ষণ
• ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করবে, কোন ছাগল অসুস্থ হলে সেটি দল থেকে সরে ধীরে ধীরে চলবে বা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে।
• সুস্থ ছাগল এক মনে খাদ্য গ্রহণ ও সবসময়ে সাবলীল ভঙ্গিতে চলাবে
• ছাগলের নাক ও চোখ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে • সুস্থ ছাগলের পায়খানা দানাদার হবে এবং পায়ুপথ পরিস্কার থাকবে
• দুধের বাট এবং ওলান নরম ও স্পঞ্জের মত থাকবে, কোন প্রকার দানা বা শক্ত কিছু থাকবে না
• ছাগলের কাছে কোন আগন্তুক এলে সুস্থ ছাগল সাবলীল ভঙ্গিতে মাথা উঁচু করে তাকাবে এবং কিছুক্ষণ পর পুনরায় খাদ্য গ্রহন শুরু করবে।
ছাগলের প্রজনন ব্যবস্থাপনা
• বাড়ন্ত ছাগী ৫-৬ মাসে প্রথম গরম হয়, তবে তখন পাল না দেয়াই ভাল
• প্রজননের জন্য ছাগীর বয়স ৭-৮মাস, ওজন ১২-১৩কেজি হওয়া প্রয়োজন ছাগী গরম হওয়ার লক্ষণ- মিউকাস নিঃসরণ, ডাকাডাকি করা, ইত্যাদি
• প্রজননের সময় কম বয়সের পাঠীকে কম বয়সের পাঠার সাথে পাল দেয়া ঠিক নয়, কেননা এতে ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর হার বেশী হবে
• ছাগল গরম হওয়ার লক্ষণ ও প্রজননের উপযুক্ত সময় ছাগী গরম হওয়ার ১২-১৪ ঘন্টা পর পাল দিতে হয়, অর্থাৎ সকালে গরম হলেবিকেলে এবং বিকেলে হলে পরদিন সকালে পাল দিতে হবে
• ছাগী সাধারণত পাল দেওয়ার ১৪২-১৫৮ দিনের মধ্যে বাচ্চা দেয়
• বাচ্চা দেয়ার ২০-৩০দিনের মধ্যে স্থাণী পুনরায় গরম হয়, অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা দেয়ার ৯-১২ দিনের মধ্যেও গরম হতে পারে
• তবে ছাগীকে বাড্ডা দেয়ার ১.৫-২ মাস পর পাল দেয়া উত্তম • পাল দেওয়ার জন্য নির্বাচিত পাঁঠা সব সময় নিঃরোগ ভাল বংশের/খাঁটি ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের পাঠা হতে হবে
• ছাগলের সুস্থ বাচ্চার জন্য ছাগীর বাবা বা দাদা বা ছেলে বা নাতীকে দিয়ে প্রজনন করানো যাবে না।
পাঁঠা পালন ব্যবস্থাপনা
• একটি পাঠা সাধারণতঃ ৩/৪ মাস বয়সে যৌবন প্রাপ্ত হয়, কিন্তু ৮/৯ মাস বয়সের পূর্বে পাল দেয়ার জন্য ব্যবহার করা সঠিক নয়
• প্রজননের জন্য ১০টি ছাগীর জন্য ১টি পাঁঠাই যথেষ্ট
• পাঠাকে প্রজনন কাজে ব্যবহারের জন্য ওজন ভেদে ঘাসের সাথে দৈনিক ২০০-৫০০ গ্রাম দানাদার খাবার ও ১০ গ্রাম গাঁজানো ছোলা দিতে হবে।
• ২৮-৩০ কেজি ওজনের পাঁঠার জন্য দৈনিক ৪০০ গ্রাম দানাদার খাবার দেয়া প্রয়োজন, কোন ভাবেই পাঠাকে বেশী চর্বি জমতে দেয়া যাবে না • একটি পাঁঠা ১০ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে।
দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যাঃ
• দুগ্ধবতী ছাগল তার ওজনের ৫-৬ শতাংশ হারে শুদ্ধ পদার্থ খেয়ে থাকে • একটি তিন বছর বয়স্ক ২য় বার বাচ্চা দেয়া ছাগীর গড় ওজন ৩০ কেজি হারে দৈনিক ১.৫-১.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ খেয়ে থাকে, এক্ষেত্রে ১-১.৫ কেজি পরিমান শুষ্ক পদার্থ ঘাস থেকে (৩-৫ কেজি কাঁচা ঘাস) বাকি ০.৫-০.৮ কেজি শুষ্ক পদার্থ দানাদার খাদ্য থেকে দেয়া উচিত,
• যেহেতু ছাগী বাচ্চা দেয়ার ১.৫-২.০ মাসের মধ্যে গর্ভবতী হয়, সেজন্য প্রায় একই পরিমানের খাবার গর্ভাবস্থায়ও ছাগলকে দিতে হবে
• গর্ভবতী ছাগীর দানাদার খাদ্য সকালে ও বিকালে ভাগ করে দিতে হবে
• গর্ভবর্তী ছাগীর খাদ্যে হঠাৎ পরিবর্তন আনা যাবে না, যেমন গর্ভবর্তী ছাগী কাঁচা ঘাসে অভ্যস্ত থাকলে তাকে হঠাৎ ইউ.এম.এস দেয়া ঠিক হবে না • বাচ্চা প্রসবের পর ছাগলকে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম চিটাগুড় এবং ২ গ্রাম লবন মিশ্রিত ২-৩ লিটার পানি পান করাতে দিতে হবে
• প্রসবকৃত ছাগীকে অল্প টাটকা জাউভাত ও ভাল ঘাস সরবাহ করতে
• ফুল (Placenta) পড়লে সাথে সাথে সরিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নবজাত ছাগলের বাচ্চার পরিচর্যা ৪
• প্রসবের পর পরই বাচ্চার মুখমণ্ডলের পিচ্ছিল পদার্থ পরিষ্কার করতে হবে
• পায়ের ক্ষুর ও নাভী কাটার পর সেখানে জীবানু নাশক ঔষধ লাগাতে হবে • বাচ্চাকে চেটে পরিষ্কার করার জন্য মায়ের সামনে রাখতে হবে।
• নবজাত বাচ্চাকে জন্মানোর আধ ঘন্টার মধ্যে শাল দুধ খাওয়াতে হবে
• বাচ্চা ঠান্ডায় কাতর, সে জন্য শীত নিবারণের ব্যবস্থা করতে হবে • ছাগলের বাচ্চার মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে ডায়রিয়া, তাই ছাগলের বাচ্চাকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গায় রাখতে হবে
• একটি দেড় কেজি ওজনের বাচ্চার প্রথম মাসে গড়ে দৈনিক ২০০ ৩০০ মি.লি. দ্বিতীয় মাসে ৩০০-৪০০ মি.লি এবং তৃতীয় মাসে ৪৫০-৬০০ মি.লি দুধের প্রয়োজন, তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বাচ্চা অতিরিক্ত দুধ না খায়, তাহলে পেট খারাপ করতে পারে
• বাচ্চার সংখ্যা বেশী হলে এবং চাহিদার তুলনায় কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে, এ ক্ষেত্রে দুধ খাওয়ানোর আগে দুধের ফিডার পানিতে ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে
• বাচ্চাকে অন্তত ১.৫-২.০ ঘন্টা পর পর মায়ের দুধ খেতে দেয়া
প্রয়োজন
• বাচ্চার বয়স ৬০-৯০ দিন হলে দুধ ছেড়ে দেবে
• ছাগলের বাচ্চাকে জন্মের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঘাসের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে, তবে মায়ের সাথেই বাচ্চা ঘাস খেতে শিখে এবং দুই সপ্তাহ থেকেই বাচ্চা অল্প অল্প ঘাস খাওয়া শুরু করে
• বাচ্চাকে দুর্বা বা অন্যান্য কচি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে, তাছাড়া ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, ধইনচা ইত্যাদি পাতাও খাওয়ানো যেতে পারে
• ছাগলের বাচ্চাকে ১মাস বয়স থেকেই ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এর সাথে দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর অভ্যস্থ করাতে হবে।
• ছাগল ছানা প্রথমে মায়ের সাথেই দানাদার খাবার খেতে অভ্যস্থ হয়
• যে সব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহৃত হবে না, তাদেরকে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে খাসি করাতে হবে।

যোগাযোগ করুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন


বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মৎস্য বাংলাদেশ

আমাদের সম্পর্কে
আপনাকে মাছ চাষের তথ্য ও পরামর্শ ওয়েব সাইটে স্বাগতম। আমাদের লক্ষ্য নতুন মৎস্য চাষী তৈরী করা এবং তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা।

মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।

সংযুক্ত থাকুন

মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।


উদ্ভাবন ও পরিকল্পনায়
হৃদয় জোমাদ্দার

হৃদয় জোমাদ্দার

ঢাকা, বাংলাদেশ।

[email protected]

স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।