নতুন বিজ্ঞপ্তি

বাগদা চিংড়ি

বাগদা চিংড়ির বানিজ্যিক চাষ...

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ঘেরে ১৯৯৪ সালে ভাইরাস রোগের প্রাদুর্ভাবের ফলে আধা নিবিড় বাগদা চিংড়ি চাষ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায় । এতে চিংড়ির সার্বিক উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই চাষ পদ্ধতি পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট থেকে আবদ্ধ পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ির আধা-নিবিড় চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে । এ পদ্ধতিতে ভাইরাসমুক্ত অবস্থায় বাগদা চিংড়ি চাষ করা অনেকাংশে সম্ভব।

আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ কি?
রোগের সংক্রমন প্রতিহত করার জন্য গতানুগতিক পদ্ধতির ন্যায় ঘেরের পানি পরিবর্তন না করে পানিকে ঘেরে আবদ্ধ রেখে উক্ত পানিতে চিংড়ি চাষের পদ্ধতিকে আবদ্ধ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ বলে অভিহিত করা হয় ।

আবদ্ধ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
■ কোন পানি পরিবর্তন না করা।
■ প্রতি ঘেরে একটি জলাধারের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে জলাধার হতে পরিশোধিত পানি ব্যবহার করা। পানির গভীরতা ১.০মিটার এর অধিক রাখার ব্যবস্থা করা। বাহিরের জোয়ার কিংবা পার্শ্ববর্তী ঘেরের পানি কোনভাবেই যাতে ঘেরে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা ।
■ কোন জৈব সার ব্যবহার না করা। ঘেরে জৈব পদার্থের পরিমান নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পরিমিত খাদ্য প্রয়োগ করা।
■ ঘেরে জমাকৃত জৈব পদার্থের বিরুপ প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহসহ প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
■ জলজ আগাছা, ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষতিকারক গ্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঘেরের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা।
■ ঘেরের মাটি ও পানির বাফার ক্ষমতা, পি-এইচ ও ক্ষারত্বসহ অন্যান্য ভৌত-রাসায়নিক গুণাবলীসমূহ স্থিতিশীল রাখা।
■ চাষকালীন সময়ে পানিতে পর্যাপ্ত প্লাঙ্কটন (প্রাকৃতিক খাদ্যকণা) এর উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

ঘের প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনা
■ ঘেরের পাড় নির্মাণঃ ঘেরের পাড় শক্ত ও উচু হতে হবে যাতে প্রয়ােজনে প্রায় ১.৫মি, উচ্চতায় পানি ধরে রাখা যায় । পাড়ে কাঁকড়া বা ইদুরের গর্ত থাকলে তা ভালভাবে বন্ধ করতে হবে।
■ জলাধার নির্মাণঃ মােট চাষ এলাকার ১৫-২০% এলাকায় একটি জলাধার নির্মাণ করতে হবে, যাতে প্রয়ােজনে জলাধার হতে পরিশােধিত পানি সহজে চাষের ঘেরে সরবরাহ করা যায়।
■ঘের শুকানােঃ সমস্ত জলজ আগাছা পরিস্কার করে ঘের এমনভাবে শুকাতে হবে যাতে ঘেরের মাটি ফেটে না যায় এবং যে কেউ ঘেরের উপর দিয়ে হাটলে পায়ের হালকা ছাপ মাটিতে পড়ে।
■ ঘের তলার মাটি সরানােঃ মাটির উপরে জমাকৃত ৬-৮ সে.মি এর অতিরিক্ত কাদা সরিয়ে ফেলতে হবে।
■ চুন প্রয়ােগঃ হেক্টর প্রতি ২৫০ কেজি হারে ডলােচুন ও পাথুরে চুন এর মিশ্রণ (৩:১) খুব সকালে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলা হতে পাড়ের উপরিভাগ পর্যন্ত চুন ছিটাতে হবে মাটি চাষঃ ঘেরের উপরের ৬-৮ সে.মি. মাটি চাষ করে চুন ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
■ ঘেরে প্রবেশ প্রতিরােধ ব্যবস্থাঃ ঘেরের চারিদিকে ছােট ফাঁসের নাইলনের জাল দিয়ে প্রায় ১মি, উঁচু করে এমনভাবে ঘেরা দিতে হবে যাতে কোন সাপ, ব্যাঙ কিংবা অন্য যে কোন ক্ষতিকর প্রাণী ঘেরে প্রবেশ করতে না পারে ।
■ নার্সারী স্থাপনঃ ঘেরের এককোণে ঘেরের ৫-৭% এলাকায় বাশের ফ্রেম ও ছােট ফাঁসের নাইলনের জাল দিয়ে প্রায় ১,৫মি. উচু করে ঘিরে একটি নার্সারী তৈরী করতে হবে। ঘেরে পানি ঢুকানাের পর নার্সারীর ভিতরে পােনার আশ্রয় হিসাবে কয়েকটি নাইলনের জাল লম্বালম্বি ও খাড়া করে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
■ পানি সরবরাহঃ পার্শ্ববর্তী নদী বা খাল হতে ছেঁকে প্রয়ােজনীয় লবনাক্ত পানি (কমপক্ষে ১.০মি) ঘেরে প্রবেশ করাতে হবে।
■ সার প্রয়ােগঃ চুন প্রয়ােগের ৫-৭ দিন পর ইউরিয়া ৬০ গ্রাম, টিএসপি ৩০ গ্রাম প্রয়ােগ করা যেতে পারে।
■ পানিতে বাতাস সরবরাহের ব্যবস্থাঃ ঘেরের চারদিকে পাড় হতে ২.০-২.৫ মিটার দূরত্বে একটি করে পেডেল হুইল স্থাপন করতে হবে। ১,৫০০-২,০০০ বর্গ মিটার আয়তনের প্রতিটি পুকুরের জন্য একটি পাম্প মেশিনের সাহায্যে পানি অন্দোলনের মাধ্যমেও প্রয়ােজনীয় বাতাস সরবরাহ করা যেতে পারে।

পােনা মজুদ
■ ব্যবস্থাপনার ওপর ভিত্তি করে প্রতি বমি.এ ১০-১২টি সুস্থ ও সবল ভাইরাসমুক্ত বাগদা চিংড়ি পােনা মজুদ করা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লাভজনক এবং পরিবেশ টেকসই।
■ প্রয়ােজনীয় সংখ্যক পােনা নার্সারীতে মজুত করতে হবে। ১৫-২০দিন প্রতিপালনের পর নার্সারীর ঘেরা জাল তুলে দিলে চিংড়ি সম্পূর্ণ ঘেরে ছড়িয়ে যাবে।

খাদ্য সরবরাহ
■ নার্সারীতে পােনা মজুদের পর দৈনিক ৬ঘন্টা অন্তর ১ম, ২য় এবং ৩য় সপ্তাহে মােট পােনার ওজনের যথাক্রমে ১০০-১২৫% ৮০% এবং ৬০% হারে নার্সারী খাদ্য প্রয়ােগ করতে হবে।
■ সম্পূর্ণ ঘেরে পােনা অবমুক্ত করার পর অর্থাৎ চাষের ৪র্থ, ৫ম এবং ৬ষ্ঠ সপ্তাহ পর্যন্ত দৈনিক ৬ ঘন্টা অন্তর মােট পােনার ওজনের যথাক্রমে ৩০%, ২০% এবং১০% হারে খাদ্য ছিটিয়ে প্রযােগ করতে হবে।
■ এরপর চাষের ৭০-৭৫দিন পর্যন্ত দৈনিক ৬ ঘন্টা অন্তর এবং পরবর্তী দিনসমূহে দৈনিক ৭ঘন্টা অন্তর খাদ্যের অপচয়রােধে "চাহিদানুযায়ী খাদ্য সরবরাহ" পদ্ধতিতে মজুদকৃত চিংড়িকে ট্রেতে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে ট্রেতে অতিরিক্ত খাবার অবশিষ্ট না থাকে।
■ খাদ্য প্রয়ােগের পর অনুমানিক এক ঘন্টা প্যাডেল দুই কিংবা পাম্প চালানাে যাবে না।
■ চিংড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ৩৫-৪০% আমিষ, ২০-৩০% শর্করা, ৫-১০% ফ্যাট ও ১-২% ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স সমৃদ্ধ পিলেট খাবার প্রয়ােজন।

বাতাস/অক্সিজেন সরবরাহ
ঘেরে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ৪ পিপিএম এ নেমে এলে পেডেল হুইল কিংবা পাম্প চালিয়ে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়া জমাকৃত জৈব পদার্থসমূহ যাতে না পঁচে তাড়াতাড়ি প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে, সেজন্য অন্ততঃ দৈনিক কয়েক ঘন্টা পেডেল হুইল/পাম্প চালাতে হবে।

পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন
পানি সরবরাহের প্রয়ােজন হলে জলাধারের পানি পরিশােধন করে ৮-১০দিন পর ঘেরে সরবরাহ করতে হবে। ঘেরের কোন পানি পরিবর্তন করা যাবে না।

চুন ও সার প্রয়ােগ
পি-এইচ ৭.৫ এর নীচে নেমে গেলে কিংবা সকাল ও বিকালের পি-এইচ এর মাত্রা ০,৫ এর বেশী হলে অবশ্যই চুন প্রয়ােগ করতে হবে। এ অবস্থায় প্রতি হেষ্টরে ১০-১৫ পিপিএম হারে ডলােচুন প্রয়ােগ করা যেতে পারে। পানির স্বচ্ছতা ৩ সে.মি. বেশী হলেই ১.০-১.২ পিপিএম ইউরিয়া এবং ১.৫-১.৮ পিপিএম টিএসপি প্রয়ােগ করা যেতে পারে ।

আগাছা নিয়ন্ত্রণ
যে কোন ধরণের জলজ আগাছা আধা-নিবিড় চিংড়ি চাষে একটি বিশেষ প্রতিবন্ধকতা । কারণ জলজ আগাছা জন্মলে ঘেরের পানির গুণগতমান সহনীয় পর্যায়ে রাখা অসম্বব হয়ে পড়ে । তাই দৈনিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কায়িক শ্রম দ্বারা আগাছা পরিস্কার করতে হবে।

চাষ পদ্ধতি :

পুকুর নির্বাচন : বাণিজ্যিক মাছচাষের জন্য অপেক্ষাকৃত বড় আকারের পুকুর, ৪০ শতাংশ বা তদূর্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। পানির গভীরতা ৪ থেকে ৬ ফুটের মধ্যে হলে ভাল হয়। মাটি দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ এবং পুকুরটি আয়তাকার হওয়া উত্তম।


* পাড় ও তলদেশ: পাড়ে ঝোপ-ঝাড় থাকলে পরিষ্কার করতে হবে। পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে (কমপক্ষে দৈনিক ৮ ঘন্টা) সূর্যালোক প্রবেশের সুবিধার্থে সম্ভব হলে বড় গাছ কেটে ফেলতে হবে। সম্ভব না হলে অন্তত ভেতর দিকের ডাল-পালা কেটে ফেলতে হবে প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশন করে পুকুরের পাড় মেরামত ও তলদেশ অতিরিক্ত কর্মমুক্ত করে সমান করতে হবে। অন্যথায় পুকুরের পানির গুণাগুণ দ্রুত খারাপ হয়ে যাবে। তাছাড়া, তলদেশ সমান না হলে পরবর্তীতে মাছ আহরণ করা কঠিন হবে।
* জলজ আগাছা ও অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ দুরীকরণ: যদি পানি প্রাপ্তি বিশেষ সমস্যা না হয় তাহলে পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে সব জলজ আগাছা এবং অবাঞ্চিত মাছসহ রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করা যেতে পারে। পানি প্রাপ্তি সমস্যা হলে, প্রথমে পুকুরে বারবার জাল টেনে যতদূর সম্ভব সকল মাছ ধরে ফেলতে হবে। এরপর অবশিষ্ট সব মাছ ধরে ফেলার জন্য প্রতিশতক আয়তন ও প্রতিফুট পানির গড় গভীরতার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম হারে রোটেনন প্রয়োগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ ফুট পানির গড় গভীরতার এক একর পুকুরে ১০-১২ কেজি রোটেনন লাগবে।
* চুন প্রয়োগ: রোটেনন প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে প্রয়োগর ২/১ দিন পর প্রতি শতকে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এই হারে এক একর জলায়তন বিশিষ্ট পুকুরের জন্য চুন লাগবে ১০০ কেজি।

সার প্রয়োগমাত্রা/শতক
অজৈব সার ইউরিয়া ২০-২৫ গ্রাম
টিএসপি ১০-১৫
সরিষার খৈল ১৫০-২০০ গ্রাম

পোনা মজুদ
সময় ও সতর্কতা: পুকুর প্রস্তুতির ৪/৫ দিন পর যখন পানি হালকা সবুজ রং ধারণ করবে তখন পানা মজুদ করা যাবে। চাপের পোনা ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসেই মজুদ করা হয়। প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোনা পুকুরে ছাড়ার সময় পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য পাত্রের পানি পুকুরের পানির সাথে কিছুটা সময় নিয়ে অল্প অল্প করে পরিবর্তন করতে হবে, যেন পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পি এইচ (pH) ক্রমশ পুকুরের পানির মত হয়ে যায়। এর পর পাত্রের পানিসহ মাছ ধীরে ধীরে পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।
মজুদ হার
*দেশে এখন অঞ্চল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মজুদ হার ব্যবহৃত হচ্ছে, এতে সংখ্যার পাশাপাশি পোনার ওজন ও কম-বেশি হয়। পদ্ধতি ও প্রজাতিভেদে পোনার আকার ২৫০ গ্রাম থেকে ১.৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। প্যাডল হুইলে বা এ্যারেটরের সাহায্যে পানিতে অক্সিজেন মিশ্রণ ও পানি প্রবাহ তৈরির সুযোগ থাকলে মজুদ হার বাড়ানো এবং বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব।

রাসায়নিক পদ্ধতি
ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ
ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে পুকুরের জমাকৃত জৈব পদার্থ, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, পি-এইচ ও তাপমাত্রা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও জৈব পদার্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধির সুযোগ পায় না । এন্টিবায়োটিক্স প্রয়োগের মাধ্যমে ঘেরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা নষ্ট করা যায় । কিন্তু সঙ্গত কারণে চিংড়ি পুকুরে বিষাক্ত এন্টিবায়োটিক্স ব্যবহারের উপর বিধি-নিষেধ রয়েছে । তাই ঘেরে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমিয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য রায়ায়নিক পদ্ধতি এবং জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

রাসায়নিক পদ্ধতি
পুকুরের ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চাষের ৪০-৪৫দিন পর হতে প্রতি মাসে একবার ৪-৬ পিপিএম হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করতে হবে। এতে সব ধরণের ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে যাবে।

জৈব প্রযুক্তি
ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়োটিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত চাষের ৪০-৪৫দিন পর থেকে ব্লিচিং প্রয়োগের দু'দিন পর ১.০-১.৫ পিপিএম হারে প্রোবায়োটিক্স প্রয়োগ করা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, ৭০-৮০ দিন চাষের পর অতিরিক্ত জৈব পদার্থ জমা হওয়ার ফলে ঘেরের মাটিতে বিভিন্ন প্রকার গ্যাস তৈরী হয়ে মাটির রং কালচে হয়ে যায়। এমতাবস্থায়, ১.৫-২.০ পিপিএম হারে প্রাবায়োটিক্স বেলে মাটির সাথে মিশিয়ে মন্ড করে ঘেরে সরবরাহ করলে সুফল পাওয়া যায় ।

পানিতে দ্রবীভূত ক্ষতিকারক গ্যাস নিয়ন্ত্রণ
ঘেরে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ছাড়াও চিংড়ির জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরণের গ্যাস (অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি) তৈরী হয়ে পানিতে দ্রবীভূত হয়। পুকুরের পরিবেশ সুস্থ রাখার স্বার্থে পানিতে যাতে কোনভাবেই ক্ষতিকারক গ্যাসমূহের মাত্রা বৃদ্ধি না পায়, সেজন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসব ক্ষতিকারক গাস নিয়ন্ত্রণের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।
■ চাষের দু মাস পর থেকে অন্তত মাসে একবার ৩০-৪০% পানি পরিবর্তন করলে পুকুরে প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই জলাধারের পরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে হবে। তবে দিনে ১০-১৫% এর বেশি পানি পরিবর্তন করা উচিত হবে না । এতে চিংড়ি পীড়িত হতে পারে।
■ পুকুরে কোন প্রকার জৈব সার প্রয়োগ হতে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকতে হবে ।
■ পুকুরে সম্পূরক খাদ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে । কারণ অপরিমিত সম্পূরক খাদ্য ব্যবহারে পুকুরে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং পানি দূষিত হয় ।
■ পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন এর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
■ অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্য চাষের ৫০ দিন পর থেকে প্রতি মাসে ৩.০-৪.০ পিপিএম হারে জিওলাইট ব্যবহার করা যেতে পারে ।
■ পুকুরে প্রাঙ্কটন উৎপাদনের | মাত্রা বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

চিংড়ি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা
■ চাষকালীন সময়ে সপ্তাহে একবার চিংড়ির বৃদ্ধি পরীক্ষা এবং দৈনিক অন্ততঃ একবার চিংড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা বিশেষ প্রয়োজন।
■ খাবার প্রয়োগের এক ঘন্টা পর ট্রে তুলে ট্রেতে উঠে আসা চিংড়িসমূহ ধরে চিংড়ির ওজন স্বাভাবিক আছে কি না এবং চিড়ির খাদ্যনালীতে পর্যাপ্ত খাদ্য আছে কি না তা পরীক্ষা করা যেতে পারে সময়ে চিংড়ির রোগের চিহ্ন আছে কি না তাও পরীক্ষা করা যেতে পারে ।
■ কোন চিংড়ি পাড়ের কাছাকাছি স্থিরভাবে বসে থাকলে বুঝতে হবে যে ঘেরে কোন অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায়, অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে এবং পাড়ে বসে থাকা চিংড়িটি ধরে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ।
■ রোগ প্রতিরোধের স্বার্থে পরিশোধিত ব্যতীত কোনক্রমেই এক ঘেরে ব্যবহৃত জিনিষপত্র অন্য ঘেরে ব্যবহার করা যাবে না।

উৎপাদন
এই পদ্ধতিতে ১২০দিন লালন করার পর প্রতি বমি, এ ১০টি ঘনত্বে চিংড়ির গড় ওজন ৩০ গ্রাম এবং বাঁচার হার ৭৫% হিসাবে প্রতি হেক্টরে মােট ২,২৫০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব। শতকরা ২০ ভাগ জলাধারের আয়তন বিবেচনা করলে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন দাঁড়াবে ১,৮৭৫কেজি। একই পদ্ধতিতে প্রতি বর্গ মিটারে ১৫টি মজুদ ঘনত্বে চাষী পর্যায়ে চাষ করে হেক্টর প্রতি ২,৫০০ কেজি উৎপাদন পাওয়া যায় ।

আয় ও ব্যয়
এক হেক্টর ঘেরে প্রতি বর্গ মিটারে ১০টি মজুদ ঘনত্বে চিংড়ি চাষ করে সর্বমােট উৎপাদন খরচ হবে টা, ৪,০০,৮২০/- এবং উৎপাদিত চিংড়ি বিক্রি করে মােট আয় হবে টা. ৯,৭৮,০০০/- অর্থাৎ এক হেক্টর জমি হতে এক মৌসুমে (৫-৬ মাস) টা, ৫,৭৭১৮০/- নীট মুনাফা অর্জিত হবে। পানিতে দীর্ঘস্থায়ীত্ব সম্পন্ন উন্নত মানের দেশীয় চিংড়ি খাদ্য সহজলভ্য হলে উৎপাদন ব্যয় আরও ২০% কমানো সম্ভব।

পরামর্শ
■ চিংড়ি আহরণের পর ঘেরের জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ পানি ও তলায় পুঞ্জিভূত জৈব পদার্থ বাইরে বের না করে পুকুরেই রিসাইক্লিং করার জন্য ফসল চক্র ভিত্তিক চাষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
■ এজন্য দ্বিতীয় ফসলে আবর্জনা ও উদ্ভিদভােজেী মাছ চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে ।
■ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ফসলচক্রভিত্তিক চাষ ততটা লাভজনক না হলেও পরিবেশ সহনীয় ও টেকসই প্রযুক্তি হিসাবে আবদ্ধ পদ্ধতির চাষে ফসল চক্রের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যোগাযোগ করুন

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

মৎস্য বাংলাদেশ

আমাদের সম্পর্কে
আপনাকে মাছ চাষের তথ্য ও পরামর্শ ওয়েব সাইটে স্বাগতম। আমাদের লক্ষ্য নতুন মৎস্য চাষী তৈরী করা এবং তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা।

মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করি
সুখী সমৃদ্ধ দেশ গড়ি।

সংযুক্ত থাকুন

মৎস্য বাংলাদেশ ওয়েব সাইটির সাথে থাকতে ই-মেইল ঠিকানা লিখুন।


উদ্ভাবন ও পরিকল্পনায়
হৃদয় জোমাদ্দার

হৃদয় জোমাদ্দার

ঢাকা, বাংলাদেশ।

[email protected]

স্বত্ব © ২০২১-২২ মৎস্য বাংলাদেশ সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত।